স্টাফ রিপোটার (রাকিব)ঃ
নওগাঁয় জীম্মি করিয়া জোড় পূর্বক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর গ্রহণ এবং মুক্তিপণের টাকা আদায়ের ঘটনা ঘটিয়াছে । সরেজমিনে গিয়ে কিসমত ভবানীনগর গ্রামের মোঃ আলেম প্রামানিক –এর স্ত্রী মোছাঃ রাজিয়া বেগম এর সঙ্গে দেখা করে তার নিটক হতে উক্ত ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন যে, নামাশিকারপুর গ্রামের মৃত বসরত কবিরাজ -এর ছেলে মোঃ সরাপ কবিরাজ এবং একই গ্রামের মৃত তছির উদ্দীন মোল্লা –এর ছেলে মোঃ আছির উদ্দীন মোল্লা উভয়ে পরিকল্পিত ভাবে গত ২৫/০১/২০২২ ইং তারিখে মোঃ সরাপ কবিরাজ আমার নাতনী মোছাঃ সীমা বেগম -এর নিকট মোবাইলে করে আমার সঙ্গে কথা বলতে চায়। আমি তখন মোঃ সরাপ কবিরাজ এর সঙ্গে মোবাইল কথা বলি। তখন মোঃ সরাপ কবিরাজ আমাকে বলেন যে, আপনি এবং আপনার স্বামী নওগাঁ শহরে আসেন। আমি কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন যে, আমার চাচাতো ভাইয়েরা আপনার পিতার সম্পত্তির একটি জাল দলিল বের করেছে। উক্ত জাল দলিলের একটি কপি আমার নিকট আছে। দেখতে চাইলে বা নিতে চাইলে আমার সঙ্গে নওগাঁ শহরে এসে দেখা করে জাল দলিলটি সংগ্রহ করুন। আমি সরল বিশ্বাসে নওগাঁ শহরে আনুমানিক ০২.০০ ঘটিকার সময় মোঃ সরাপ কবিরাজ -এর সাঙ্গে পাটালীর মোড়ে দেখা করি। আমাকে ও আমার স্বামীকে পাটালীর মোড় থেকে মোঃ সরাপ কবিরাজ একটি বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে মোঃ সরাপ কবিরাজ এবং তার সহযোগী মোঃ আছির উদ্দীন মোল্লা উভয়ের সঙ্গেই আমাদের কথপোকথন হয়। আমি তখন জাল দলিলটি দেখতে চাইলে মোঃ সরাপ কবিরাজ দেখাব বলে। কিন্তু, না দেখিয়ে আমাকে একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিতে বলে। আমি স্বাক্ষর দিতে না চাইলে জোড় জবদস্তি করে আমার নিকট হতে উক্ত স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয় এবং আমার স্বামীকে বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতি ও হুমকি দেখায়। স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার পর আমার কাছে থেকে মুক্তিপণ হিসেবে ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা দাবী করে। আমি এতগুলো টাকা এক সঙ্গে কোথায় থেকে দিব বললে তখন মোঃ সরাপ কবিরাজ আমার ছেলে মোঃ সিরাজুল ইসলাম এর মোবাইলে ফোন করে আমাদের মুক্তিপণ হিসেবে ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা দাবী করে এবং আমার ছেলেকে হুমকি ধামকী ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বলে যে, তোর বাবা ও মা কে জীবিত দেখতে চাইলে দ্রুত ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা নিয়ে আমার সঙ্গে দেখা কর। যদি পুলিশকে বিষয়টা জানাস তবে তোর ভালো হবে না। আমি আমার প্রথম স্ত্রীকে মেরে ফেলেছি। আমার কেউ কিচ্ছু করতে পারে নাই এবং এখনো পারবে না। আমার কথা অনুযায়ী কাজ না করলে তোর বাবা ও মাকে মেরে ফেলব। তখন আমার ছেলে নিরুপায় হয়ে ধার কর্য করে ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা সংগ্রহ করে মোঃ সরাপ কবিরাজ -এর নির্দেশ অনুযায়ী নওগাঁ শহরের পাটালির মোড়ে গিয়ে তাকে মুক্তিপণের টাকা দিয়ে আমাকে ও আমার স্বামীকে মুক্ত করে। আমি ও আমার আত্মীয় স্বজন পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে গত ২৭/০১/২০২২ ইং তারিখে নওগাঁ সদর মডেল থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করি। উক্ত ঘটনার বিষয়ে মোছাঃ রাজিয়া বেগম এর নাতনী মোছাঃ সীমা বেগম –এর নিকট হতে জানতে চাইলে তিনি বলে যে, আমার মোবাইলে মোঃ সরপা কবিরাজ ফোন করে আমার দাদা এবং দাদীকে জাল দলিল দেখানোর কথা বলে নওগাঁ শহরে যেতে বলেছিল। মোছাঃ রাজিয়া বেগম এর স্বামী মোঃ আলেম প্রামানিক –এর নিকট হতে উক্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন যে, আমাদেরকে মোঃ সরাপ কবিরাজ জাল দলিল দেখানোর কথা বলে পাটালীর মোড়ের একটি বাসায় নিয়ে গিয়ে আমার স্ত্রীর নিকট হতে একটি স্ট্যাম্পে জোর করে স্বাক্ষর নেয় ও মুক্তিপণ হিসেবে ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা গ্রহণ করিয়া আমাদেরকে ছাড়িয়া দেয়। উক্ত ঘটনার বিষয়ে মোছাঃ রাজিয়া বেগম এর ছেলে মোঃ সিরাজুল ইসলাম -এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন যে, মোঃ সরাপ কবিরাজ তার মোবাইল ফোন হতে আমার মোবাইল ফোনে কল করে জানায় যে, তোর বাবা ও মাকে জীবিত দেখতে চাইলে ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা নিয়ে আমার সঙ্গে দেখা কর এবং সে তার মোবাইল দিয়ে আমার বাবা ও মায়ের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়। আমি আমার বাবা ও মায়ের সঙ্গে কথা বললে তারা আমাকে বলেন যে, তাড়াতাড়ি আমাদের উদ্ধার কর। নয়তো আমাদেরকে মেরে ফেলবে। আমি দ্রুত ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) সংগ্রহ করে মোঃ সরাপ কবিরাজ –এর নির্দেশ অনুযায়ী নওগাঁ শহারের পাটালীর মোড়ে গিয়ে তাকে মুক্তিপণের টাকা পরিশোধ করে আমার বাবা ও মাকে মুক্ত করে বাড়িতে নিয়ে যাই। পরে আমার বাবা ও মায়ের নিকট থেকে জানতে পারি যে, মোঃ সরাপ কবিরাজ ও তার সহযোগী মোঃ আছির উদ্দীন মোল্লা আমার মাকে দিয়ে জোর করে একটি স্ট্যাম্পেও স্বাক্ষর করে নিয়েছে। আমি তখন আমার মাকে সঙ্গে নিয়ে নওগাঁ সদর মডেল থানায় গিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করি এবং প্রতিকারের জন্য অভিযোগটি জেলা প্রশাসক, নওগাঁ জেলা, নওগাঁ ও পুলিশ সুপার নওগাঁ জেলা, নওগাঁ বরাবর প্রেরণ করি। উক্ত ঘটনার বিষয়ে মোঃ সরাপ কবিরাজের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি বলেন যে, মোছাঃ রাজিয়া বেগম –এর ছেলে মোঃ সিরাজুল ইসলাম বিদেশ যাবে বলে মোঃ আছির উদ্দীন মোল্লা –এর নিকট হতে এফিডেভিট করে ধার হিসেবে নগদ ২,০০,০০০/- (দুই লক্ষ) টাকা গ্রহণ করে। আমি কোন জাল দলিলে সহি বা স্বাক্ষর নেই নাই। উক্ত ঘটনার বিষয়ে মোঃ আছির উদ্দীন মোল্লা –এর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাকে বাড়িতে পাওয়া যায় নাই। উক্ত ঘটনার বিষয়ে নওগাঁ সদর থানায় কথা বলে জানা যায় যে, অভিযোগ পাওয়ার গেছে এবং তদন্ত্রের প্রক্রিয়া চলছে । জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার কার্যালয়ে যোগাযোগ করে জানা যায় যে, অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।মোছাঃ রাজিয়া বেগম বলেন যে, বর্তমানে তিনি স্বপরিবারে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগিতেছেন এবং তার পরিবার সহ সকলের জীবনের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য প্রশাসনের নিকট অনুরোধ জানিয়েছেন।
Leave a Reply