1. tistanewsbd2017@gmail.com : Tista24 :
April 30, 2024, 6:11 pm

মেধার জোরেই রাজশাহী  মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেল জলঢাকার দরিদ্র পরিবারের সন্তান আয়েশা 

Reporter Name
  • Update Time : Wednesday, April 17, 2024
  • 9 Time View

 হাসানুজ্জামান সিদ্দিকী হাসান নীলফামারী প্রতিনিধি

গরীবের সংসার। দিনে আনে দিন খায়। কোন রকমে চলে সংসার। পিতা হত দরিদ্র। দারিদ্র্য  মা বাবার এমন সংসারেই বেড়ে উঠেছে আয়েশা ছিদ্দিকা। অর্থাভাবে প্রতিদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩  কিলোমিটার পায়ে হেটে  যাওয়া আসার মাধ্যমে বহু কষ্টে এসএসসি, এইচএসসি পাস করেছেন। মেধা পরিশ্রেমের কারনেই এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল বিভাগে চান্স পেয়ে পিতা-মাতার কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছেন।
গল্পটা শুরু আয়েশাকে নিয়ে।
অর্থাভাবে নিজের এসএসসি পরীক্ষার দিন ঘরে খাবার ছিল না।তবে তার অদম্য ইচ্ছার শক্তির কাছে পরাজয় মেনেছে এমন হাজারো প্রতিকূলতা। এবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল বিভাগে  ভর্তির সুযোগ পেয়েছে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের আলশিয়া পাড়ার দারিদ্র্য দুলু মায়ার মেয়ে আয়েশা ছিদ্দিকা।
অভাবের সংসার। ঘরে দুবেলা ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা নেই, সেই ঘরে এত বড় সুখের খবর যেন পাড়া-প্রতিবেশীদের হতবাক করেছে। আনন্দের বন্যা বইছে পুরো এলাকায়।
তার সন্তানের ব্যাপারে দুলু বলেন, আয়েশা কে লেখাপড়ার কোনো খরচই আমি দিতে পারিনি।, আমি দিনমজুরি করে ও ভ্যান চালিয়ে  যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার চালাতেই কষ্ট হয়ে যেত।

তিনি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই আয়েশা মেধাবী। এখনতো মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে। দুলু আরো বলেন, আমি দুশ্চিন্তায় আছি ওর ভর্তির টাকা কোথায় পাব ও ওর স্বপ্ন কিভাবে পুরন করবো ?  আয়েশার মা মায়া বলেন, আমার মেয়ে ছোটবেলা থেকে খাবারের জন্য  কষ্ট করেছে। ঠিকমত নতুন একটা জামাও কিনে দিতে পারিনি। সে জীবনে অনেক কষ্ট করেছে। সে কষ্টকরে লেখা পড়া করে আজ মেডিকেলে চান্স পাওয়ার খবরে খুব ভালো লাগছে। কিন্তু কীভাবে ভর্তি করবো সেটাই বুঝতেছি না। তিনি বলেন, আমরা মেয়ের স্বপ্ন কিভাবে পুরন করো ভেবে পাচ্ছি না।

আয়েশা ছিদ্দিকা বলেন, আমার মেধা পরিশ্রম ও ইচ্ছা শক্তির কারনে আজ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। আমি ছোটবেলা থেকেই দুর্বিষহ অভাবের মধ্যে বড় হয়েছি। বাবা প্রতিদিন যা আয় করতেন তা সংসারের পেছনেই খরচ হয়ে যেত। আমি ষষ্ঠ শ্রেণিতে ওঠার পর টিউশনি শুরু করি। প্রথমে টিউশনি করালেও অনেকে টাকা দিত না। তবে অষ্টম শ্রেণিতে উঠে পুরোদমে টিউশনি শুরু করি এবং নিজের টাকায় লেখাপড়া শুরু করি।করোনা মহামারির সময়ে  মায়ের সঙ্গে আলাপ করি- কোনো চাকরিতে ঢুকে পড়ব কিনা। মা তাতে রাজি হননি। যত কষ্টই হোক তিনি লেখাপড়া চালিয়ে যেতে বললেন। আয়েশা জানান, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পান।  কৈমারী সদরের স্কুল এন্ড কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি এবং  এইচএসসি পাস করেন। তিনি বলেন, সংগ্রাম করে এই পর্যন্ত এসেছি। এখন দুশ্চিন্তায় আছি ভর্তি নিয়ে। ভর্তি হতে সম্ভবত ১৫ থেকে ২০ হাজারের মতো টাকা লাগে।এত টাকা জোগাড় করতে পারবো কিনা জানি না। এদিকে কৈমারী স্কুল এন্ড কলেজের  অধ্যক্ষ বলেন, আয়েশা ছিদ্দিকা নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। কিন্তু অত্যন্ত মেধাবী। ওর আচরণে সব শিক্ষক খুশি। খুব বিনয়ী একটা মেয়ে। তার মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়া খবরে শুধু আমরাই নয়, পুরো এলাকাবাসী খুশি।অজপাড়া গায়ের আয়েশা হাজারো প্রতিকূলতার মাঝে নিজেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করেছে। তিনি বলেন, ওর পরিবার এতটাই দরিদ্র যে আয়েশা যেদিন এসএসসি পরীক্ষা দিতে যায় সেদিন ঘরে ওর কোনে খাবার ছিল না।এতো কঠিন প্রতিকূলতার মধ্যেও আমার ছাত্রী মেডিকেলে চান্স পেয়েছে জেনে গর্বে বুক ভরে যাচ্ছে।

শিক্ষক মর্তুজা বলেন, ছোটবেলা থেকেই ওকে আমি যতদূর পেরেছি সাহায্য করেছি।

কৈমারী  ইউনিয়েনর স্থানীয় ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য  বলেন, আয়েশা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় এলাকাবাসী খুশি। ওর ভর্তির বিষয়ে আমরা সাহায্য করব। তিনি বলেন মেয়েটি খুবই নিরিহ। সে খুবই ভাল। তাকে সাহার্য করতে এলাকাবাসী প্রস্তুত।এদিকে আয়েশার মেডিকেলে ভর্তির টাকা যোগার করতে না পাড়ার খবর জানতে পেরে তার পিতা মাতা সহ আয়েশাকে ডেকে পাঠান স্থানীয় সাংসদ সাদ্দাম হোসেন পাভেল। তিনি তাদের দারিদ্রতার খবর শুনে আয়েশার মেডিকেল কলেজে ভর্তির দায়িত্ব নেন। সেই সাথে আয়েশার বই কেনা ও অনুসাঙ্গিক খরচ এর সহযোগিতার আশ্বাস দেন জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জি আর সারোয়ার  ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার চঞ্চল কুমার ভৌমিক ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 Jaldhaka IT Park
Theme Customized By LiveTV