কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি বেদখলের কারণে বিদ্যালয়ে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এতে করে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিও বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রশাসনের নেই কোন উদ্যোগ।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার সিংগার ডাবরিহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সিগার ডাবরিহাট বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্মুখ স্থানে অবৈধ ভাবে দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আছে কিনা বোঝা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে সিংগার ডাবরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাউন্ডারি দেয়াল ও গেইট নির্মাণের জন্য প্রায় ৯লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। কাজের টেন্ডার হলেও প্রভাবশালী অবৈধ দখলদারদের কারণে নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এসব অবৈধ দোকান ঘর উচ্ছেদের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েও কোন সুরহা মিলছেনা। ফলে যেকোন মূহুর্তে সরকারি এই বরাদ্দ ফেরত যাবার শংকা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ কয়েক বছর থেকে এই জায়গা উচ্ছেদের একাধিকবার উদ্যোগ নেয়া হলেও অজ্ঞাত কারণে সেটি ভাটা পড়ে যায়। এতে করে উপজেলার গ্রামাঞ্চলের স্বনাম ধন্য এই বিদ্যালয়টি উন্নয়ন না হওয়ায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শিক্ষার পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। আর পাঠদানে নানা ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষকরা। সরকারি এই জায়গায় অবৈধভাবে ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ রায় কর্মকার,বড়াইপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সাবেক ইউপি সদস্য নুরনবী মিয়া,বর্তমান ইউপি সদস্য আব্দুল বাতেন,অবসর প্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিদর্শক আজিজুল হক,বণিক সমিতির সভাপতি ওয়াহেদ মাস্টারসহ স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্রের প্রায় ৩০টি দোকানঘর নির্মাণ করেছেন।
দেশের সকল স্কুল-কলেজ গেইটের সামনে কোন স্থায়ী-অস্থায়ী দোকান না রাখার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ বাহিনীকে সুপারিশ করা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১৮তম বৈঠকে।
সিংগার ডাবরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফিসা আক্তার জানান,আমাদের স্কুলের কোন বাউন্ডারি ওয়াল নেই। স্কুলের পাশ দিয়ে দোকান ঘর থাকায় শ্রেণী কক্ষে কোন আলো আসে না। সেজন্য ক্লাস করতে সমস্যায় পড়তে হয়।
ইয়াসা খাতুন জানান,স্কুলের পাশে দোকান ঘর থাকায় সবসময় সরগোল লেগে থাকে। এতে করে ভালভাবে ক্লাস করা যায় না। বাউন্ডারি ওয়াল ভিষণ দরকার আমাদের জন্য।
অভিভাবক আব্দুল মমিন বলেন,স্কুলের সামনে দোকান থাকায় এখানে বুঝায় যায় না স্কুল আছে। ছোট একটা গেইট দিয়ে বাচ্চাদের স্কুলে প্রবেশ করতে হয়।
আবু বকর সিদ্দিক বলেন,স্কুলের সামনে অবৈধ দোকান থাকায় স্কুলের যে সৌন্দর্য্য সেটি নষ্ট হয়ে আছে। আমরা এলাকাবাসী চাই অবৈধ দোকান তুলে এখানে বাউন্ডারি ওয়াল করা হোক। তাহলে স্কুলের সৌন্দর্য ফিরে আসবে পড়ালেখার মানও বাড়বে।
বণিক সমিতির সভাপতি ওয়াহেদ মাষ্টার স্বীকার করেন স্কুলের সামনে যত গুলো দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে সব গুলোই অবৈধ ভাবে নির্মিত। সরকারের যখন দরকার হবে তখন ভেঙ্গে দেবে।
অবৈধ দখলদার ইউপি সদস্য আব্দুল বাতেন বলেন,আমরা এখানে ২৫/৩০বছর ধরে দোকান করে জীবন চালাচ্ছি। আমাদের পূর্ণবাসন করে তারপর ভেঙ্গে দ্যাক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ব্যবসায়ী বলেন,অবৈধভাবে এসব দোকান ঘর নির্মাণ করে লক্ষ-লক্ষ টাকা সিকিউরিটি নিয়ে ভাড়া দিয়েছে। মাসিক এসব দোকান থেকে ২/৫হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া তোলেন দোকানদাররা। এখান থেকে সরকার কোন রাজস্ব পায় না।
সিংগার ডাবরিহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম আক্তারুজ্জামান বলেন, ৯২শতক জমির মধ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ সামনের অংশে প্রায় ১৫শতক জমি বেদখল। অবৈধ এসব দোকান ঘর থাকায় আমাদের নানান রকমের সমস্যায় পড়তে। সবসময় শব্দ দূষণ হয়ে থাকে। এতে করে শিক্ষক,শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে রয়েছি। বাউন্ডারি ওয়ালের জন্য বরাদ্দ আসলেও কাজ হচ্ছে না। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। কিন্তু দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই।
সিগার ডাবরিহাট বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আরিফুল ইসলাম বলেন,এসব অবৈধ দোকান ঘর উচ্ছেদের জন্য উদ্যোগ নেয়া হলেও সফল হয়নি। উল্টো আমাদেরকে হুমকি ধামকি মুখে পড়তে হয়েছে। শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে এই সব দোকান উচ্ছেদ প্রয়োজন।
রাজারহাট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নজরুল ইসলাম অবৈধ দখলের কথা স্বীকার তিনি বলেন,উপজেলায় প্রায় ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি অবৈধ দখলে রয়েছে। এরমধ্যে সিংগারডাবরিহাট, ঘড়িয়ালডাঙ্গা, পাঙ্গা,নাজিমখা,বোতলা,বৈদ্যের বাজার, চাকিরপশার তালুক,ডাংরারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি অবৈধ ভাবে দখলে রয়েছে। উপজেলার যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জমি দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধারে প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতা চান তিনি।
রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূরে তাসনিম বলেন,দ্রুত অবৈধ উচ্ছেদের বেদখলকৃত জমি উদ্ধারে অভিযান শুরু করা হবে।
Leave a Reply