নীলফামারী প্রতিনিধি,,,
নীলফামারীতে তিস্তায় আট ঘন্টায় ৩৭ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। সোমবার বেলা দুইটায় ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর আগে সকাল ছয়টায় সেখানে বিপৎসীমার সাত সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রানি প্রবাহিত হয়েছিল। উজানের ঢলে আকস্মিক পানি বৃদ্ধির কথা জানায় পাউবো সূত্র।
তিস্তায় ফের পানিবৃদ্ধির ফলে জেলার ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদী বেষ্টিত পূর্ব ছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ি, খগাখড়িবাড়ি, খালিশাচাপানী, ঝুনাগাছচাপানী, গয়াবাড়ি এবং জলঢাকা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি ও শৌলমারী ইউনিয়নের ২০ গ্রামের আট সহ¯্রাধিক পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। পরিবারগুলোর বাড়ি-ঘরে হাটু ও কোমর পরিমান পানি বিরাজ করার কথা জানান এলাকাবাসী ও জন প্রতিনিধিরা।
ডিমলা উপজেলার টেপাখাড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ময়নুল হক বলেন, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। পানির তোরে ইউনিয়নের স্বপন বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার ভেঙে গেছে। পূর্ব খড়িবাড়ি গ্রামে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত বাঁধটিতে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এ অবস্থা কত সময় ধরে চলবে জানি না। এরই মধ্যে বিভিন্ন গ্রামের সহস্রাধিক পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ে সরে গেছেন।
একই উপজেলার ঝুনাগাছচাপানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. একরামুল হক বলেন, সোমবার সকাল ছয়টায় পানি বিপৎসীমার নিচে ছিল। এরপর হঠাৎ করে পানি বেড়ে ইউনিয়নের ভেন্ডাবাড়ি ও ছাতুনামা গ্রামে ছয় শতাধিক পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে পরিবারগুলো আতঙ্কে রয়েছে।
পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খাঁন বলেন, সোমবার প্রবল গতিতে তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে ইউনিয়নের ঝাড়সিংহেশ্বর, পূর্ব ছাতনাই ও খোকার চরের এক হাজার ৭৫০ পরিবারের বাড়ি ঘরে কোমর ও বুকসমান পানি উঠেছে।
পাউবো সূত্র মতে, গত ১২ জুন থেকে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে বাড়া-কমার মধ্যে ছিল। গত ১৭ জুন শুক্রবার সকাল ছয়টায় প্রথমবারের মত বিপৎসীমা অতিক্রম করে ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সেদিনই সন্ধ্যা ছয়টায় পানি কমে বিপৎসীমার ১০ নেন্টিমিটার নিচে নামে। এরপর পানি বিপৎসীমার মধ্যে ওঠানামা করে।
সূত্র জানায়, সোমবার সকাল ছয়টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার সাত সেন্টিমিটার, সকাল নয়টায় চার সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর বেলা ১২টায় পানি বেড়ে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার বেলা দুইটায় ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সেখানে বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদদৌলা বলেন, সোমবার সকাল ছয়টায় তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার সাত সেন্টিমিটার নিচে ছিল। দুপুর দুইটায় বিপৎসীমার ৩০ সেণ্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের সব কটি (৪৪) জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।’
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, সকাল ১১টা থেকে বাড়তে থাকে নদীর পানি। এতে করে পূর্বছানতাই, পশ্চিম ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ী, খগাখড়িবাড়ী, খালিশাচাপানী ও ঝুনাগাছচাপানী ইউনিয়নের কয়েকটি চরগ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত এসব চরগ্রামের ৭০০ পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়েছে। এসব পরিবারের খোঁজখবর নিতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, বন্যার্তদের জন্য আমরা তিন হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার পেয়েছি। যা বিতরণ শুরু করা হয়েছে। ৬১টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
Leave a Reply