1. tistanewsbd2017@gmail.com : Tista24 :
September 7, 2024, 11:04 am

উলিপুরে তিস্তার চরাঞ্চলে কাউন চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের

Reporter Name
  • Update Time : Thursday, April 25, 2024
  • 13 Time View

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

 

কুড়িগ্রামের উলিপুরে দানাদার কাউনের চাষ করেছেন চরাঞ্চল সহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা। বাম্পার ফলনে খুশি কাউন চাষিরা। এ দানাদার ফসল কাউন চাষ হারিয়ে যাওয়ার পথে। আগের মতো কাউন চাষ আর তেমনভাবে হচ্ছে না। প্রায় দু-দশক আগেও কাউনের চাষ ব্যাপক ছিল। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে কাউনের ভাত প্রতিদিনেই খাদ্য তালিকায় থাকতো। সময়ের ক্রমাগত পরিবর্তন ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ কাউনের চাষকে পেছনে ফেলে নিয়ে এসেছে বছরে তিন-চার ফসলী উৎপাদন। কাউন চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অতিরিক্ত উৎপাদিত শস্য বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করা যায় এছাড় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, চরাঞ্চল সহ কাউন চাষের লক্ষ্য মাত্রা ৩৫ হেক্টর। কাউন চাষ একটি লাভজনক ফসল। অল্প খরচে দ্বিগুণ লাভ করা সম্ভব কাউন চাষে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কাউন চাষিদের বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই ও পোকামাকড় নিধন সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া অব্যহত রয়েছে।
তিস্তার চরাঞ্চল সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কাউন চাষিদের সাথে কথা বলে শস্যটি হারিয়ে যাওয়ার কারণ জানা যায়, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এলাকায় ইরি বোরো ধানের আবাদ শুরু হয়। এর পর থেকেই ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছিল কাউন চাষ। কারণ, ইরি বোরো ধান থেকে চাল উৎপন্ন হতে থাকলে কাউনের চালের চাহিদা কমতে থাকে। ইরি বোরো চাষ যত বিস্তার লাভ করতে থাকে কাউনের চাষের প্রতি কৃষকেরা ততই আগ্রহ হারাতে থাকে। এ ভাবেই ধীরে ধীরে এলাকা থেকে কাউন ফসলটি হারিয়ে যাওয়ার পথে। তবে কাউন চাষ একটি লাভজনক ফসল। অল্প খরচে দ্বিগুণ লাভ করা সম্ভব বলে জানান তারা।
উপজেলার তিস্তা নদীতে ভেসে উঠা চরের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হারিয়ে যাওয়া কাউনের বাম্পার ফলন হয়েছে। অল্প খরচে দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন কৃষকেরা। জমিতে থাকা সবুজের সমারহের মাঝে বাতাসে দুলছে কাউনের ছড়া। এ যেন এক অপরুপ দৃশ্য মন কেড়ে নেয়। কৃষকেরা জানান, এক সময় চরাঞ্চলের চাষিরা  কাউন শস্য পাটের বস্তায় করে ঘরে সংরক্ষণ করে রাখত। বর্ষা, বন্যা ও খরার সময় মানুষের নগদ অর্থ সংকটে কাউনই একমাত্র ছিল ভরসা।সংকটাপন্ন সময়ে চরাঞ্চল সহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন পরিবার-পরিজন নিয়ে কাউনের ভাত খেয়ে দিনাতিপাত করত। আগে মানুষ ভাতের বিকল্প হিসেবে কাউনের ভাত খেত। এখন কাউন দিয়ে সুস্বাদু পায়েস, পিঠা, নাড়ুসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য তৈরিসহ বিদেশে কাউনের চাউল রপ্তানি করছেন। এ কারণে কাউনের চাহিদা আবারো দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া অল্প খরচে দ্বিগুণ লাভের সম্ভাবনা থাকায় কাউন চাষের প্রতি ঝুঁকছেন চরাঞ্চল সহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা।
তিস্তার চরাঞ্চলের চর গোড়াইপিয়ার এলাকার কাউন চাষি চাঁদ মিয়া জানান, এবারে কাউনের চাষ করেছেন ৪০ শতক জমিতে। এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ৮ হাজার টাকা। কাউন উঠানো পর্যন্ত আরও খরচ হবে ২ হাজার টাকা। মোট খরচ হবে ১০ হাজার টাকা। কাউনের বাম্পার ফলন হয়েছে। কাউনের আশা করছেন প্রায় ১০ মণ। বর্তমান বাজারে কাউন মণ প্রতি বিক্রি হচ্ছে প্রায় ২ হাজার টাকা। মোট আয়ের আশা করছেন ২০ হাজার টাকা। যা খরচের দ্বিগুণ লাভ। তিনি আরও বলেন বিলুপ্তির পথে এ কাউন চাষ দেখার জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন দেখতে আসেন। অনেকেই আবাবার আগামীতে কাউন চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
বিভিন্ন এলাকার কাউন চাষিদের মধ্যে রবিউল ইসলাম, মহশিন আলী, আব্দুল হামিদ ও মহুবর রহমান সহ আরও অনেকে বলেন, এক সময় কাউনের ব্যাপক চাষ হত।কালের বিবর্তনে প্রযুক্তি উন্নয়নের ফলে কাউন চাষের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে চাষিরা। অথচ কাউনের চাল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের মখরোচক খাবার খাওয়া যায়। এছাড়া কাউন গাছ জমিতে পচে ভাল সার তৈরী হয়। জমির উর্বরা শক্তি বাড়ে। এখনও কিছু কিছু কৃষক ছোট পরিসরে এর চাষ টিকিয়ে রেখেছেন। কাউন চাষ বাড়ানো দরকার বলে কৃষকেরা মনে করেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন, কাউন চাষ একটি লাভজনক ফসল। এ লাভজনক ফসল প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে দিনে দিনে কাউন চাষ আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাউন চাষ বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এবারে উপজেলায় যে সকল কৃষক কাউন চাষ করেছেন ভালো ফলনে ও বাজার দর ভালো থাকায় অনেক লাভবান হবেন বলে জানান তিনি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 Jaldhaka IT Park
Theme Customized By LiveTV